এই সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন এমন কিছু করেছিলেন যা মার্কিন এবং ইসরায়েলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরাইল রাফাহ শহরে আক্রমণ করলে তিনি কী করবেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি তাদের আর অস্ত্র সহায়তা দেব না।
ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া গত চল্লিশ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বন্ধুত্বের একটি বড় অংশ। এই প্রথম তাদের সম্পর্কের মাঝে একটি সমস্যা হয়েছে.
গাজায় বেসামরিক ব্যক্তিদের আঘাত করা থেকে বিরত রাখতে এবং মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে দেশের ভিতরে এবং বিশ্বজুড়ে চাপের মুখে পড়েছেন বাইডেন। ইস্রায়েলকে অস্ত্র দেওয়া চালিয়ে যেতে হবে কিনা সে সম্পর্কে তাকে সত্যিই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।
মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ইসরাইল। ১৯৮০ সালে রোনাল্ড রিগানের পর থেকে বর্তমানে জো বাইডেন যা করেছেন তা আর কোনো রাষ্ট্রপতি করেননি।
অ্যারন ডেভিড মিলার, যিনি মার্কিন সরকারের হয়ে কাজ করতেন এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন, তিনি বলেছেন যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাইডেন কী করবেন তা নিয়ে যে বাইডেন অনিশ্চিত ছিলেন।
জো বাইডেনের দল, ডেমোক্র্যাটদের কিছু লোক চায় যে সে এক জিনিস করুক, কিন্তু অন্যরা, বিশেষ করে রিপাবলিকানরা চায় সে ভিন্ন কিছু করুক। এখনও অবধি, বাইডেনের নেয়া সিন্ধান্ত গুলো মার্কিন-ইসরায়েল বন্ধুত্বকে আঘাত করবে বলে মনে হয় না।
কিন্তু ইসরায়েল রাফাতে সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর জো বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়।
সোমবার, ইসরায়েল বলেছে যে তারা রাফাহ শহরের পূর্ব অংশে হামাসকে লক্ষ্য করে সব কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেখানে বসবাসকারী লোকজন প্রচুর বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। এছাড়া অকার্যকর হাসপাতাল গুলিতে মাত্রাতিরিক্ত আহত ব্যক্তি দিয়ে ভোরে যাচ্ছে৷
প্রায় এক লক্ষ লোককে এলাকা ছেড়ে যেতে হয়েছে কারণ ওই জায়গাটি বিপদজনক হয়ে গিয়েছিল । তাদের পর্যাপ্ত খাবার, বাসস্থান, পানি এবং পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নেই।
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলে আসছেন যে তিনি পূর্ণমাত্রায় স্থল অভিযান করতে চান, যেখানে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি আছেন যারা বর্তমানে বাস্তুচ্যুত। নেতানিয়াহু মনে করেন, সেখানে লুকিয়ে থাকা হামাসের শেষ চারটি দল আছে যাদের নিশ্চিহ্ন করা প্রয়োজন। তিনি বলেছেন যে কেউ কিছু সময়ের জন্য লড়াই বন্ধ করার পরামর্শ দিলেও তিনি এই পরিকল্পনাটি চালিয়ে যাবেন।
যুক্তরাষ্ট্র নেতানিয়াহুকে রাফাতে সেনা না পাঠাতে বলেছে। অ্যারন ডেভিড মিলার মনে করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উদ্বিগ্ন যে ইসরায়েল যদি এই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলে যুদ্ধ বন্ধ করার বা সেখানকার মানুষকে বাঁচানোর কোনো উপায় থাকবে না।
বাইডেনের জন্য কাজ করতেন এমন কেউ বলেছেন যে জো বাইডেন চান না এর কারণে মিশরের সাথে সম্পর্ক খারাপ হোক। কিন্তু একই সময়ে, এই পরিকল্পনা ডেমোক্রেটিক পার্টির লোকজনকে আরও বিচলিত ও বিভক্ত করে তুলতে পারে।
মিলার বলেছেন, “তাই তিনি এই সংকেত দিয়েছেন”।
গত বুধবার বাইডেনের সাক্ষাৎকার দেখানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলে দুই হাজার পাউন্ড ও পাঁচশ পাউন্ড ওজনের দুটি বোমার চালান বন্ধ করে দেয়।
গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক প্রতিবেদনে বলেছে, গাজা যুদ্ধে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে আমেরিকার সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে চলমান যুদ্ধে। কিন্তু এ সংক্রান্ত যাচাইকৃত তথ্য আমেরিকার কাছে নেই। যার অর্থ ভবিষ্যতে সামরিক সহায়তা চালু থাকতে পারে।