মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলমান আন্দোলনের ভুল প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে

Share This Post:

সারসংক্ষেপ

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সহিংসতার নিন্দা করেছে, যদিও এখানে প্রাণহানির বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ। সরকারি চাকরির কোটার বিষয়ে হাইকোর্টের একটি সিদ্ধান্তের কারণে এই বিক্ষোভ, ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার ফলে অসংখ্য মানুষ আহত হয় কিন্তু কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উভয়ই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার সমালোচনা করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার

ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভিকটিমদের সম্পর্কে যা বলে

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। তবে তারা জড়িতদের সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছে।

সোমবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, “আমরা ঢাকা এবং সারা বাংলাদেশে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের উপর নজর রাখছি, যেখানে দুইজন নিহত হয়েছে এবং শত শত হামলা ও আহত হয়েছে।”

মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ যেকোনো দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে যে কোনো ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানাই। এই সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি আমাদের সমবেদনা।

By US Foreign Affairs
নতুন বাজারে আন্দোলনকারীদের রাস্তা আটক

কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের একটি সার্কুলার হাইকোর্ট বাতিল করার পর শিক্ষার্থীরা টানা দুই সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছে। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা ইস্যুতে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,

কোটা আন্দোলনের আগে তাদের ফলাফল দেখা উচিত ছিল- তারা কোথায় দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা চাকরি না পেলে রাজাকারের নাতিরা-নাতনিরা চাকরি পাবে?

By Prime Minister Sheik Hasina

রোববার গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তারা স্লোগান দেয়, ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।

সংঘর্ষের বর্ণনা

সোমবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ পাল্টা কর্মসূচি পালন করে। উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায় এবং পরে ছাত্রলীগের সদস্যরা আন্দোলনকারীদের মারধর করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। প্রায় ৩০০’শ শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যায়, যাদের মধ্যে ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আহত হওয়া সত্ত্বেও, কোনো বাংলাদেশি গণমাধ্যমে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি বা বিক্ষোভকারীরাও কারো মৃত্যুর কথা দাবি করেনি।

মার্কিন যুক্তরাষ্টের দূতাবাস ব্যাখ্যা চেয়েছে

মার্কিন দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে যাতে স্পষ্ট করে জানাতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র কোথা থেকে দুই জনের নিহতের তথ্য পেয়েছে। দূতাবাসের একজন আধিকারিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, “মুখপাত্র বলেছেন আমরা সংশ্লিষ্ট সংবাদ দেখছি। আমরা এইরকম তথ্য সংগ্রহ করা চালিয়ে যাব। আমরা সর্বদা সবচেয়ে সঠিক তথ্য চাই। সত্য উদঘাটনে সাংবাদিকদের প্রচেষ্টাকে আমরা স্বাগত জানাই।” মার্কিন দূতাবাসের সাথে ব্যাখ্যা চেয়ে কথা বলেছেন বিডি নিউজ ২৪ এর কর্তৃপক্ষরা। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতি

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও সোমবার এক বিবৃতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে। “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সারাদেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এসব ঘটনায় শত শত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।”

বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিলম্ব না করে আহতদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। অ্যামনেস্টি উল্লেখ করেছে যে বেসামরিক পোশাক পরা লোকেরা, “হাতুড়ি এবং লাঠি দিয়ে” সজ্জিত, বিক্ষোভে বাধা দেয় এবং বিক্ষোভকারীদের মারধর করে, সহিংসতার সাথে জড়িতদের কথা পূর্বের সকল ঘটনায় উক্ত ব্যাক্তিদের বর্ণনার সাথে “সাদৃশ্য” উল্লেখ করে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “জনগণের অভিব্যক্তি এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে সম্মান করার জন্য এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের আরও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আইন ও সংবিধানের অধীনে তার বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে,” বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ

মার্কিনিদের এই রকম প্রতিক্রিয়াতে সরকার পক্ষ এখনো কোনো মন্ত্যব প্রকাশে আগ্রহ দেখাননি যদিও। তবে এর একটি সুন্দর ও যথাযোগ্য উত্তর আমাদের মন্ত্রী মহোদয়রা দিবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

READ MORE: বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা হ্রাস পাবে বলে ধারণা বিষেশজ্ঞদের

READ MORE: হাইব্রিড গাড়ি বনাম ইলেকট্রিক গাড়ি: মারুতি সুজুকি চেয়ারম্যানের বিতর্ক

SMASHCON
SMASHCON

"Either write something worth reading or do something worth writing."
- by Benjamin Franklin.😎